
কক্সবাজার প্রতিনিধি::
অবৈধ পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালরা এখন টার্গেট করছে উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা যুবতীদের । টেকনাফে বিভিন্ন পাহাড়ে আস্তানা গড়ে তুলেছে মানবপাচারকারী দালালরা ৷ গতকাল সকালে বঙ্গোপসাগরের ছেড়া দ্বীপের কাছে ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নাজুমা আক্তার জানিয়েছেন পাচারের আগে তাদের সাত দিন পাহাড়ে রাখা হয়েছিল৷
উদ্ধার হওয়া ছৈয়দ আলম ও নুর আমিনার সাথে কথা হয়েছে ৷ উদ্ধার করে তাদের প্রথমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাখা হয় ৷ তারা জানিয়েছেন তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ওই পাহাড়ে এনে জড়ো করা হয় কয়েকদিন ধরে ৷ মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের নোয়াখালি ঘাট থেকে তাদের ছোট ছোট নৌকায় করে গভীর সমুদ্রে আরেকটি বড় ট্রলারে তোলা হয় ৷ পরে শাহপরী দ্বীপের দক্ষিণে ও ছেড়া দ্বীপের উত্তরে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ওই ট্রলার ডুবে যায়৷ তবে তাদের অভিযোগ আছে পাচারকারীরা ইচ্ছে করে ট্রলারটি পাথরের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ডুবিয়ে দেয়৷
উদ্ধার হওয়া লেদা ক্যম্পের রোহিঙ্গা নাজুমা আক্তার জানান, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দালাল ছৈয়দ আহমদ তার পাহাড়ের আস্তানায় আমিসহ ৩০ জন নারী শিশুকে ৭ দিন ধরে নৌকায় তুলে দেওয়ার জন্য আটকে রেখে ছিল। এক বেলা ভাত দিত আর আর এক বেলা নাস্তা দিত। ট্রলারে তুলে দেওয়ার জন্য জন প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে নেই ওই দালাল। শেষ পর্যন্ত জাহাজে তুলে দিবে বলে ছোট নৌকায় তুলে দিয়ে এই অবস্থা আমাদের।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। তারা অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ট্রলারে তুলে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে আগ্রহী করে তুলছে। এর আগে একাধিক সময় টেকনাফ উপকুল ব্যবহার করে সাগর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া মানবপাচার হয়েছিল।
প্রশাসনের কঠোর প্রতিরোধে তাদের সেই অপচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এই পথে দীর্ঘদিন মানবপাচার বন্ধ থাকার পর দালাল চক্রের সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে আবারও চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ পথে মানব পাচার শুরু করেছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে কিছু দালাল এখনো মানব পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা হলেন,টেকনাফ সদরের ছৈয়দ আহম্মদ(৪৫) পিতা আলিম উদ্দিন,মিঠাপানির ছড়ার,মোঃ আলম পিতা মকবুল আহম্মদ(৩২)পূর্ব পাড়া, মোহাম্মদ আলী,পিতা আমিন কোনা পাড়া, সেন্টমার্টিন,
শাহ পরীর দ্বীপের শরীফ হোসেন (৫০)পিতা মৃতঃ জালাল আহামেদ, মিস্ত্রীপাড়া,মোঃ সেলিম ওরফে লম্বা সেলিম (৪২) পিতা মৃতঃকাছিম,হারেস (৪০) পিতা অলি ফকির, ডাংগর পাড়া,আমান মাঝি,(৫০) পিতাঃ অজ্ঞাত,হাসিনা বেগম (৩৫) পিতাঃ নুরুল ইসলাম নুরা, ডাংগর পাড়া,শুক্কুর মাঝি(৫৫) পিতা মৃতঃ মোখলেসুর রহমান মিস্ত্রি, মিস্ত্রি পাড়া, সৈয়দ উল্লাহ(৪৫) পিতা জাহের হোসেন মাঝি, মাঝের পাড়া,শহীদুল্লাহ্ (৩৫) পিতা মৃতঃ কবির আহাম্মদ, উত্তর পাড়া ,আব্দুল মান্নান (২৭) পিতাঃমোঃ ইউনুস , ডাংগর পাড়া,আবুল কালাম (৪৫)পিতা মৃতঃ মোজাহের মিয়া, মাঝের পাড়া,সাহাব মিয়া(৪৫) পিতা মৃত সুলতান, মাঝেরপাড়া, নুর হাকিম মাঝি,পিতা অজ্ঞাত, দক্ষিণ পাড়া, হোসেন আলী (৩৫) পিতাঃ আলী আহামেদ ফকির, ডাংগর পাড়া,মোঃ জাফর(৪৫) পিতা মৃতঃ নুর আহাম্মদ দক্ষিণ পাড়া,মোহাম্মদ রশিদ পিতা কবির আহম্মদ,ডেইল পাড়া, হারুনর রশিদ প্রঃ বদাইয়া, পিতা এখলাস মিয়া, জালিয়া পাড়া,সৈয়দ আলম(৪৫) পিতা অজ্ঞাত, জালিয়া পাড়া,মোঃ জোবাইর,আবসার মিয়া,নোয়াখালী পাড়া, আবদুল আলী, বাহারছড়া শাপলাপুর,থানা টেকনাফ,কক্সবাজার।
সম্প্রতি সময়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করা নিয়ে সরকার কঠোর নজরদারী থাকার কারনে অবৈধ ভাবে সাগরপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে রাজি হচ্ছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই দালাল চক্রের সদস্যরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে মানব পাচার।
সর্বশেষ ১১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সেন্টমার্টিনের অদূরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ১২০ জন রোহিঙ্গা বোঝাই যাত্রীসহ একটি ট্রলার সাগরে ডুবে যায়।
টেকনাফে দায়িত্বরত কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট এম সোহের রানা বলেন, সেন্টমার্টিনের অদূরে গভীর বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় দায়িত্বরত নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ১৫টি মৃতদেহ এবং ৮৫জন মালয়েশিয়াগামীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
পাশাপাশি এই অপকর্মে জড়িত থাকার অপরাধে ৪জন দালালকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। আটককৃত দালালরা হচ্ছে, উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃ আজিম(৩০),বালুখালী এলাকার ওসমান(১৭), টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালি পাড়া এলাকার ফয়েজ আহাম্মদ (৪৮), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছৈয়দ আলম(২৭)।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদিপ কুমার দাশ বলেন, মানবপাচারকারী দালালরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অসহায় নাগরিকদের টার্গেট করে নতুন করে সাগরপথে মানবপাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সেই চেষ্টা প্রতিরোধ করার জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, টেকনাফ উপকূল ব্যবহার করে যে সমস্ত দালাল আবারও মানব পাচার চালিয়ে যাচ্ছে সেই সমস্ত দালালদের নির্মুল করতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।
পাঠকের মতামত